মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ১৯১১ ওবায়েদ উল হক (জন্মঃ ৩১ অক্টোবর, ১৯১১ – মুত্যুঃ ১৩ অক্টোবর, ২০০৭) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাংবাদিক। তিনি একাধারে একজন লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, সুরকার, গীতিকার। তিনি দীর্ঘকাল ইংরেজী দৈনিক বাংলাদেশ অবজার্ভার-এর সম্পাদক-এর দায়িত্ব পালন করেছেন।
জন্ম ও শৈশব
ওবায়েদ উল হকের জন্ম ১৯১১ সালে ফেনী শহরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। অল্প বয়সেই শিল্প সাহিত্যের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিলো। স্কুলে থাকতেই লিখেছেন কবিতা। পড়ে ফেলেছেন অসংখ্য বই আর জড়িয়েছেন নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে লিখেছেন বিভিন্ন ম্যাগাজিনে।
শিক্ষা জীবন
১৯৩৪ সালে দর্শনশাস্ত্রে মাস্টার্স শেষ করেন তিনি। ১৯৩৬ সালে আইনশাস্ত্রে মাস্টার্স করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন।
কর্মজীবন
ওবায়েদ উল হক ১৯৩৮ সালে তিনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। এর মধ্যে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ তাঁর ভাবনাকে প্রচণ্ড নাড়া দিলো। ১৯৪৬ সালে “দুঃখে যাদের জীবন গড়া” ছবিটি মুক্তি পায় বাংলা, বিহার, আসাম এবং বার্মায় (তৎকালীন film distribution zone)। সবাই তাঁর ছবি দেখে অভিভূত হন। সিনে ম্যাগাজিন রূপমঞ্চের জরিপে সে বছর সেরা ১০টি ছবির একটি নির্বাচিত হলো তাঁর ছবিটি। ছবিটি পরে ঢাকার মানসী সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়। পরবর্তীতে দেশে এসে সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন ওবায়েদ উল হক। ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান অবজারভারে লিখলেন শত শত সম্পাদকীয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক হন তিনি। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি এর সম্পাদক ছিলেন। এরপর তিনি সম্পাদক হলেন নতুন প্রকাশিত দৈনিক ডেইলি নিউজের। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিকটির সম্পাদক ছিলেন। এরপর দৈনিক বাংলা এবং বাংলাদেশ টাইমসের বোর্ড অব ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হলেন।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক হলেন ওবায়েদ উল হক। তাঁর নেতৃত্বে অবজারভার হয়ে উঠলো দেশের অন্যতম মানসম্মত এবং জনপ্রিয় দৈনিক। তিনি অবজারভারকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন অনেক দূর। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিকটির সম্পাদক ছিলেন। এরপর তিনি সম্পাদক হলেন নতুন প্রকাশিত ‘দৈনিক ডেইলি নিউজ’-এর। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিকটির সম্পাদক ছিলেন। এরপর ‘দৈনিক বাংলা’ এবং ‘বাংলাদেশ টাইমস’-এ বোর্ড অব ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হলেন। যখন যে দায়িত্বই নিয়েছেন সেটা নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন।
যে সরকারই যখন সাংবাদিকদের জন্যে ভালো মন্দ কিছু করতে গিয়েছেন, তখনই এগিয়ে এসেছেন ওবায়েদ উল হক। আর তাই সরকার যখন দেশে একটি প্রেস ইনস্টিটিউট করার চিন্তা করলো, তার আহ্বায়ক করা হলো ওবায়েদ উল হককে। তাঁরই চেষ্টা, পরিশ্রম এবং মেধার ফলে দাঁড়িয়ে গেলো পিআইবি (প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ) তিনি পিআইবির প্রথম চেয়ারম্যান নিযুক্ত হলেন। এ সময় আরো অনেক সংগঠনের জন্যে কাজ করেছেন তিনি। তিনি একাধারে ছিলেন এডিটরস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান, নজরুল ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। অর্ধশতাব্দির বেশি সময় ধরে তিনি জড়িয়ে রয়েছেন সাংবাদিকতায়। তাঁর কাজের একাগ্রতা, পরিশ্রম, সাহস, সততা, নিষ্ঠা ইত্যাদি কারণে তিনি আজ সাংবাদিকতার মডেল।
সাহিত্য কর্ম
ওবায়েদ উল হকের প্রথম কবিতা সওগাত পত্রিকায় ছাপা হয় মাত্র ১০ বছর বয়স। এরপর বিভিন্ন ম্যাগাজিন এবং লিটল ম্যাগে নিয়মিত তাঁর কবিতা ছাপা হতে থাকে। পঞ্চাশের দশকে দিগ্বিজয়ে চোরাবাজার নামে তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয়। তিনটি একাঙ্কিকা নাটক নিয়ে বইটি। এরপর একই ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত হয় আরেকটি বই- এই পার্কে। দুটি বইই বেশ জনপ্রিয় হয়। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাহিত্য সেমিনারে জনপ্রিয় নাট্যকার এবং ঔপন্যাসিক রশীদ করিম বলেন, ওবায়েদ উল হক তাঁর দুটি কাজ- দিগ্বিজয়ে চোরাবাজার এবং এই পার্কে’র জন্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ পর্যন্ত ১৪টি বই, ছয়টি নাটক, তিনটি উপন্যাস, তিনটি কাব্যগ্রন্থ এবং ইংরেজিতে একটি আত্মজীবনী লিখেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তাঁর লেখা জীবনী গ্রন্থের নাম- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: অন্যরকম এক নেতা।
ওবায়েদুল হক একজন অসাধারণ সাহিত্যিকও। সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় অবাধ পদচারণা তাঁর। সেটি হোক কবিতা বা নাটক কিংবা প্রবন্ধ। ছোটবেলা থেকেই কবিতার প্রতি ভালোবাসা ছিলো, কবিতা লিখেছেনও ছোটবেলা থেকে। যখন মাত্র ১০ বছর বয়স তখনই তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ‘সওগাত’ পত্রিকায়। এরপর বিভিন্ন ম্যাগাজিন এবং লিটল ম্যাগে নিয়মিত তাঁর কবিতা ছাপা হতে থাকে। পঞ্চাশের দশকে ‘দিগ্বিজয়ে চোরাবাজার’ নামে তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয়। তিনটি একাঙ্কিকা নাটক নিয়ে বইটি। এরপর একই ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত হয় আরেকটি বই- ‘এই পার্কে’ দুটি বই-ই বেশ জনপ্রিয় হয়। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাহিত্য সেমিনারে জনপ্রিয় নাট্যকার এবং ঔপন্যাসিক রশীদ করিম বলেন, ‘ওবায়েদ উল হক তাঁর দুটি কাজ- দিগ্বিজয়ে চোরাবাজার এবং এই পার্কে’র জন্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
তার যত কাজ
ওবায়েদ উল হক ১৪টি বই, ছয়টি নাটক, তিনটি উপন্যাস, তিনটি কাব্যগ্রন্থ এবং ইংরেজিতে একটি আত্মজীবনী লিখেছেন। তাঁর লেখা নাটকগুলো হলো- ‘এই পার্কে’, ‘দিগ্বিজয়ে চোরাবাজার’, ‘সমাচার এই’, ‘রুগ্ন পৃথিবী’, ‘ব্যতিক্রম’ এবং ‘যুগসন্ধি’। ‘দ্বৈত সঙ্গীত’, ‘সংগ্রাম এবং ঢোল’-এই তিনটি তাঁর উপন্যাস। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলো হল- ‘দ্বিধার ফসল’, ‘ছায়ানগর সংলাপ’ এবং ‘গরিব হতে চাই’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তাঁর লেখা জীবনী গ্রন্থের নাম- ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: অন্যরকম এক নেতা’ ওবায়েদুল হক তাঁর নিজের কাজগুলো সংগ্রহ রাখার ব্যাপারে উদাসীন। তিনি তাঁর ‘দিগ্বিজয়ে চোরাবাজার’ বইটির শেষ কপিও একজনকে দিয়ে দেন। বইটির একটি কপিও তাঁর কাছে ছিলো না। তাঁর ছেলে একদিন ফুটপাত থেকে বইটি কিনে আনেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
একুশে পদক (১৯৮৩)
ইউনিসেফ স্বর্ণপদক (১৯৮৩)
আব্দুস সালাম স্বর্ণ পদক
জহুর হোসেন চৌধুরী স্বর্ণ পদক
অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণ পদক
বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৪)
মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা
মৃত্যু:
শনিবার, ১৩ অক্টোবর ২০০৭
***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***
@FeniOnline
Comments