ফেনীর বিলাস চন্দ্র সাহা আর্থিক অনটনের কারণে পরিবারের হাল ধরতে একটি আড়তের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। চার বছরের মাথায় চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নামেন। ৩০ বছর পর এখন তাঁর বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০ কোটি টাকা।
এরপর আর্থিক অনটনের কারণে পরিবারের হাল ধরতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় বিলাস। কিন্তু লেখাপড়া কম হওয়ায় ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। শেষে স্থানীয় একটি আড়তে সহকারী হিসেবে কাজ নেন তিনি।
সততা ও মনোযোগ দিয়ে কাজ করার সুবাদে মালিকের আস্থা অর্জন করেন বিলাস। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে আড়তের হিসাবরক্ষণের দায়িত্ব দেন মালিক। প্রবল ইচ্ছা থাকলেও বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র বিলাস চন্দ্র কাজের চাপে আর পড়ালেখা করতে পারেননি।
নিজেই কিছু করার আশায় চার বছরের মাথায় বিলাস ওই আড়তের চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পরে ভাবতাম, একদিন তাঁর মতো বড় ব্যবসায়ী হব। কিন্তু ব্যবসায়ের জ্ঞান আর পুঁজি ছিল না তখন। পরে কিছুটা স্বাবলম্বী হয় চাকরি ছেড়ে নিজেই ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিই।’
বিলাস চন্দ্র জানান, ২০০৩ সালে ফেনী সদরের রামপুর এলাকায় তিনি ২৫ লাখ টাকার পুঁজি আর ১২ জন কর্মী নিয়ে মুড়ি-চিড়া তৈরির একটি কারখানা চালু করেন। পরের বছর ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগে গড়ে তোলেন ডালের কারখানা। আর ২০১৬ সালে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করেন আটা-ময়দা তৈরির কারখানা।
বিলাস চন্দ্র প্রথম আলোকে জানান, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে তিনি বিভিন্ন ধরনের ডালসহ ধান, গম, ভুট্টা প্রভৃতি সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও কাঁচামাল আমদানি করেন। বর্তমানে তিনি ইউক্রেন, রাশিয়া, রোমানিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে সাদা মটর, মসুর ডাল, শর্ষে, গম, ছোলা ও দানাজাতীয় শস্য ইত্যাদি আমদানি করে নিজের কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে নোয়াখালী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চলের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন।
বিলাস চন্দ্র জানান, প্রতিবছর তাঁর ব্যবসায়ে ২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। গত বছর মোট লেনদেন হয়েছে ১৭০ কোটি টাকার। তাঁর কারখানাগুলোতে বর্তমানে কাজ করেন প্রায় আড়াই শ মানুষ।
পাইকারি ব্যবসার পাশাপাশি এখন বিলাসের লক্ষ্য হচ্ছে, নিজের কারখানায় উৎপাদিত পণ্য মোড়কজাত করে সারা দেশে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া। এ জন্য নতুন কারখানা করতে হবে। বিলাস বলেন, ‘আমার কারখানার পণ্য দেশের বড় বড় কোম্পানি কিনে নিয়ে ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রি করে। আমার কারখানার মুড়ি দেশের বাইরে রপ্তানি হয়। সে জন্য আমি নিজেই এখন ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে চাই।’
বিলাস চন্দ্র জানান, পণ্য মোড়কজাতকরণ কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটির (বেজা) কাছে প্লট চেয়ে তিনি ইতিমধ্যে একটি আবেদন করেছেন। তাঁর আশা, আগামী দুই বছরের মধ্যে নতুন কারখানা স্থাপন করে উৎপাদনে যেতে পারবেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আঁচ লেগেছে বিলাস চন্দ্রের ব্যবসাতেও। যুদ্ধের কারণে এই দুই দেশে থেকে সরাসরি পণ্য আনতে পারছেন না তিনি। ফলে রোমানিয়া থেকে বেশি খরচে পণ্য আনতে হচ্ছে তাঁকে।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বিলাসের পরামর্শ, কথায়-কাজে মিল রেখে ধৈর্য ধরে সামনে এগোনো উচিত। ব্যবসায়ে আসতে হলে ব্যবসা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা থাকতে হবে। বেশি লাভের আশায় না বুঝে কোথাও টাকা বিনিয়োগ করা ঠিক নয়। আর যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন, কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না।
***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***
@FeniOnline
Comments