fbpx

ভাটির বাঘ ‘শমশের গাজী’র ভিটায়

সোলায়মান হাজারী ডালিম:

 

নবাবের স্মৃতিধন্য ভিটেমাটি 
নবাবের স্মৃতিধন্য ভিটেমাটি

 

ফেনী: শমসের গাজী ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী এবং ত্রিপুরার রোশনাবাদ পরগণার কৃষক বিদ্রোহের নায়ক। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসন প্রতিহত করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরিচিতি লাভ করেন ভাটির বাঘ হিসেবে।

দর্শনার্থীদের আনাগোনা

ছাগলনাইয়া পৌর শহর থেকে মোটরসাইকেলে প্রায় ঘণ্টাখানেকের পথ পাড়ি দিয়ে গাজীর ভিটার কাছাকাছি আসার পর চোখে পড়বে পাহাড়ের লাল মাটি। মনে হবে লাল মাটির অন্য ভূখণ্ডে যেন এসে পড়েছেন। উঁচু-নিচু ছোট পাহাড়ি টিলাগুলোর পাদদেশের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেত যেন গাজীর ভিটায় অভ্যর্থনা জানাচ্ছিল আমাদের। খানিক হাঁটার পর দেখা মিলেছিল বাঁশের বেড়ার প্রবেশপথ। প্রবেশ ফি পাঁচ টাকা দিয়ে প্রবেশ করতেই সে এক অন্যরকম অনুভূতি।

সমতল থেকে কিছুটা উঁচুতে একটি টং দোকান। এখানে আসা দর্শনার্থীরা এই দোকানটায় কিছুটা বিশ্রাম নেন এবং এ ভিটায় উৎপাদিত ফল কিনে খান। কথা হয় দোকানি ফয়েজ উল্লাহর সঙ্গে। কথা বলে জানা গেছে, ষাটোর্ধ্ব ফয়েজ উল্লাহ প্রায় ৩০ বছর আগে নবাবের বংশধরদের থেকে এ ভিটাটি লিজ নিয়েছেন।

তার দোকানে ঝালমুড়ি আর পেয়ারা খাওয়ার পর হাঁটতে শুরু করি দুই সহকর্মীসহ। হাঁটতে হাঁটতে বইয়ের পাতায় পড়া ইতিহাস আওড়াতে থাকি-এখানে বুঝি এক সময় অকুতোভয় বীরের রাজত্ব ছিল!

নবাবের স্মৃতির ভিটায় টঙ দোকান

ভ্রম কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ চোখে পড়লো পেয়ারে গাছে পাকা পেয়ারা। পাশেই কামরাঙ্গা গাছে কামরাঙ্গা, জলপাই, আমড়া। পুরো টিলায় হরেক প্রজাতির ফল আর ফুলের গাছ। হৃদয় হরণকারী রূপ এ আঙ্গিনাটার। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এখানটায় শুয়ে বসেই কাটিয়ে দিতে মন চাইবে।

দূর থেকে দেখা গেল কিছু মানুষের জটলা। কাছে গিয়ে দেখা গেল তারা একটি পুকুরে ঢিল ছুড়ছে। কিন্তু ছোড়া ঢিল কেউই পুকুরের ওপারে নিতে পারছিল না। ফয়েজ উল্লাহ জানালেন, এটি নবাব শমসের গাজীর স্মৃতিধন্য এক দীঘি। এখন পর্যন্ত গুলি ছুঁড়ে এ দীঘির ওপারে নিতে পারেনি কেউ। দীঘির মাঝখানেই পড়েছে বুলেট। দেখতে তেমন বড় না হলেই এমনটাই হচ্ছে। দীঘি দেখে কিছুটা পথ হেঁটে যাওয়ার পর চোখে পড়লো সুড়ঙ্গ। এলাকার তত্ত্বাবধায়নকারী ফয়েজ উল্লাহ জানালেন, এ সুড়ঙ্গটি দিয়ে রাজপ্রাসাদের নারীরা দীঘিতে গোসল করতে যেতেন।

এক খুইল্লা দীঘি

তিনি আরও জানান, শমসের গাজীর স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনগুলোর কিছু অংশ এখানে আর কিছু অংশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশের জগন্নাথ সোনাপুর গ্রামে রয়েছে নবাববাড়ি দীঘির একাংশ, অস্ত্রাগার, বাগানবাড়ি, হাতিশালা ও সুড়ঙ্গপথ। অন্যদিকে বাড়ি ও দীঘির বড় অংশই রয়েছে ত্রিপুরার মনুবাজার, করিমাটিলা এবং পাইনাখোলা এলাকায়।

শমসের গাজীর বাঁশেরকেল্লা রিসোর্ট
নবাব শমসের গাজীর বংশধর পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঞাঁ নবাবের স্মৃতি ধরে রাখতে শমসের গাজীর বাঁশেরকেল্লা রিসোর্টটি তৈরি করেন।

বাঁশ দিয়েই গড়ে তোলা হয় এই কেল্লা। পরম যত্নে  তৈরি করা আধুনিক নান্দনিক নির্মাণশৈলী বলে মনে হবে এ কেল্লাকে।

২০ টাকা দর্শনীর বিনিময়ে বাঁশের এই রিসোর্টে পারিবারিক ঘরোয়া পরিবেশে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। রয়েছে সুপরিসরে সাজানো চা কর্নার, রিডিং রুমসহ থাকার ঘর। পাশেই দৃষ্টিনন্দন লেক এবং লেকে নৌকায় সময় কাটানোর সুযোগ, লেকের ওপর একটি সুদৃশ্য কালভার্ট। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য।

শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট

আরও রয়েছে বাংলার নবাবদের প্রাচীন কীর্তিকে স্মরণ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যেন সেই নবাবী আমল থেকে বসে বাঁশেরকেল্লা পাহারা দিচ্ছে আজও। গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির আরও অনেক উপকরণের সমন্বয় প্রায় ৫ একরের পুরো পর্যটনকেন্দ্র চমকপ্রদ করে তোলার চেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তা ওয়াদুদ ভূঁঞা। এখনকার প্রতিটি আসবাবপত্রই বাঁশ দিয়ে তৈরি করা।

রিসোর্টটির পুরো আঙিনায় রয়েছে নানা শৈল্পিক আয়োজন, বিভিন্ন ধরনের ফল আর ফুলের বাগান। সেই বাগানের পাশের খোলা আঙিনার ধারে বাঁশের মাচা করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি ঘর। সেই ঘরে রয়েছে মুক্ত অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা। বাঁশেরকেল্লায় যদি থাকতে চান তাহলে যোগাযোগ করতে হবে ০১৭৬৭-৮৬৩৫৫৮ নম্বরে।

গাজীর ভিটায় যাওয়ার পথ
ফেনী জেলা শহরের কলেজ রোড শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতানের সামনে থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ছাগালনাইয়া বাজারে জনপ্রতি ভাড়া নেবে ২৫ টাকা। এরপর ছাগলনাইয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যাওয়া যাবে। ভাড়া নেবে ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা।

অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বারইয়াহাট হয়ে শুভপুর ব্রিজের ওপারে শুভপুর বাজার গেলেই সোজা পূর্বদিকে একটি সড়ক বেয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার পেরিয়ে গ্রামীণ জনপদ। শুভপুর বাজারে পৌঁছলেই যে কেউ দেখিয়ে দেবে শমশের গাজীর ভিটা এবং বাঁশেরকেল্লা।

***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***

FeniOnline.net Telegram Channel@FeniOnline

Comments

DMCA.com Protection Status
Bidvertiser2074653
error: Something went wrong !!