fbpx

৪৮ বছরেও অরক্ষিত ফেনীর অর্ধশত বধ্যভূমি

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার ও নৃশংসতার দুঃসহ স্মৃতি বহন করছে ফেনীর অন্তত অর্ধশত বধ্যভূমি। যেখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিকামী বাঙালিদের। তবে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও এসব বধ্যভূমির কয়েকটি বাদে অধিকাংশই চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করা হয়নি, যা নিয়ে জেলার মুক্তিযোদ্ধা ও নিহতদের পরিবারের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা ও ক্ষোভ।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফেনীর বিভিন্ন স্থানে হত্যাযজ্ঞ চালায়। নির্বিচারে হত্যার পর মরদেহ ফেলে দেয়া হয় পুকুর, খাল, নদী-নালা ও জঙ্গলে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব স্থানকে বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কথা ছিল স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণেরও। তবে দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে দাবি জেলার মুক্তিযোদ্ধা ও স্বজন হারানো মানুষের।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর আবদুল হান্নান জানান, ফেনীর বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে অন্তত ৫০টি বধ্যভূমির তালিকা আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ফেনী সরকারি কলেজ এলাকার বধ্যভূমি, দাগনভূঞার রাজাপুর বধ্যভূমি, ফুলগাজী জামুড়া গ্রামের বধ্যভূমি, পরশুরামের মালিপাথর বধ্যভূমি ও সলিয়া বধ্যভূমি অন্যতম। এর থেকে কয়েকটি বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হলেও সেগুলো পড়ে রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়।

তিনি আরো জানান, ফেনী সরকারি কলেজ কম্পাউন্ডের বধ্যভূমির একাংশের ওপর কলেজের অনার্স ভবন রয়েছে। ভবনটির পেছনের অংশে বধ্যভূমির কিছু জায়গাজুড়ে রয়েছে ময়লার স্তূপ ও সেপটিক ট্যাংক। কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীই এ বধ্যভূমির ইতিহাস সম্পর্কে জানে না। এছাড়া কলেজের দক্ষিণাংশে বধ্যভূমিটিকে কেন্দ্র করে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি হলেও সেটির বিষয়ে কোনো যত্ন নেই। একই অবস্থা ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের বধ্যভূমিটিরও। এখানেও একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই।

এদিকে দাগনভূঞার রাজাপুরের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম পাটোয়ারী জানান, রাজাপুর স্কুলের পাশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আস্তানা ছিল। আশপাশের এলাকা থেকে বাঙালিদের ধরে এনে এখানে নির্যাতন করা হতো। এখানেই চৌধুরীবাড়ির পশ্চিম পাশের পুকুরে মুক্তিযোদ্ধা আশরাফকে হত্যা করে মরদেহ ফেলে দেয়া হয়। একই স্থানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারাত্মক আহত হয়ে বেঁচে যান ডাক্তার আবদুল হালিম। এলাকাবাসীর দাবি এ স্থানকে বধ্যভূমি ঘোষণা করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও সংরক্ষণ করা হোক।

ফুলগাজীর জামুড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান জানান, জামুড়ায় হানাদার বাহিনী ২৬ জনকে বটগাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনা তিনি নিজে দেখেছেন। নিহতদের মধ্যে শরিফা খাতুন, সেতারা বেগম, আবুল মনসুর, জোহরা আক্তার অ্যানি ও সাইফুল ইসলামের নাম তিনি জানেন। এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জোর দাবি জানান ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এ মুক্তিযোদ্ধা।

কথা হয় পরশুরামের মালিপাথর এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মাওলানা নুরুল আমিনের সঙ্গে। তিনি জানান মালিপাথরে তার বাবা, চাচা ও জেঠাসহ পাঁচজনকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। এ বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করা হলেও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।

পরশুরামের মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন শাহরিয়ার জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় সলিয়া বধ্যভূমিতে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়। কিন্তু এটি আজো চিহ্নিত করা হয়নি।

এ ব্যাপারে কথা হলে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ জেলায় অনেক বধ্যভূমি রয়েছে; যা ফেনীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে সবগুলো বধ্যভূমি চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কিছু বধ্যভূমি চিহ্নিত করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বাকিগুলোও সংরক্ষণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

 

তথ্যসুত্র: বণিক বার্তা প্রতিনিধি ফেনী

 

***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***

FeniOnline.net Telegram Channel@FeniOnline

Comments

DMCA.com Protection Status
Bidvertiser2074653
error: Something went wrong !!