প্রারম্ভিক জীবন
বেগম খালেদা জিয়ার প্রকৃত নাম খালেদা খানম পুতুল। আগস্ট ১৫, ১৯৪৫ সালে দিনাজপুরে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ভাইয়েরা সবার ছোট। তাঁর পিতামহ হাজী সালামত আলী, মাতামহ জলপাইগুড়ির তোয়াবুর রহমান। বাবা জনাব ইস্কান্দর মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার।তার স্বামী বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান বীরউত্তম। তার এক ভাই মেজর(অবঃ) সাইদ ইস্কান্দার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে ফেনী-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তার দুই ছেলের মধ্যে বড় তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তার কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। আরাফাত রহমান একজন ব্যবসায়ী ছাড়াও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও সিটি ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন।
স্থায়ী নিবাস
দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়া। আদি পিতৃ-ভিটা ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ী। বাবা জনাব ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ইস্কান্দর মজুমদার ১৯১৯ সালে ফেনী থেকে জলপাইগুড়ি যান। বোনের বাসায় থেকে মেট্রিক পাস করেন ও পরে চা ব্যবসায়ে জড়িত হন। ১৯৩৭ সালে জলপাইগুড়িতে বিয়ে করেন। জল্পাইগুড়ির নয়াবস্তি এলাকায় ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বসবাস করেন। ১৯৮৪ সালের ১৫ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। মা বেগম তৈয়বা মজুমদার ছিলেন একান্ত ভাবে একজন গৃহিনী। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেই থাকতেন।
শিক্ষা
খালেদা জিয়ার স্কুলজীবন শুরু হয় পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে। এরপর দিনাজপুর গার্লস স্কুলে ভর্তি হন। তিনি এই স্কুল থেকেই অষ্টম শ্রেণী পাশ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বিয়ে
১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে জিয়াউর রহমানের সাথে তার বিয়ে হয়। জিয়াউর রহমানের ডাক নাম কমল। জিয়া তখন ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। ডি এফ আই এর অফিসার হিসাবে তখন দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সংসার
রাজনীতিতে বেগম জিয়া
আন্দোলন
১৯৮৩ সালের বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে সাত দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পনের দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচী শুরু করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাঁধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙ্গে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখান করে। ১৯৮৭সাল থেকে খালেদা জিয়া “এরশাদ হটাও” এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙ্গে দেন। পুনরায় শুরু হয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর একটানা নিরলস ও আপোসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার কায়েম করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ কে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাশ হয়।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। যা পরবর্তীতে ৯৬ এর একদলীয় নির্বাচন হিসেবে গণ্য হয়। সকল বিরোধীদলের আপত্তির পর ও খালেদা জিয়া ও তার দল এই একক নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগ সহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করে। এই সংসদ মাত্র ১৫ দিন স্থায়ী হয়। খালেদা জিয়া এই সংসদের ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রবল গণ আন্দোলন ও বর্হিবিশ্বের চাপে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হয় এবং খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট ১১৬ আসনে জয় লাভ করে, যা সরকার গঠনে যথেষ্ঠ ছিলনা। আওয়ামী লীগ মোট ১৪৭ আসন লাভ করে, তারা জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপি সপ্তম সংসদে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহত্ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর শাসনকালে সংসদে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন ।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি জামাতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া এই সংসদেও প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। মহাজোটের প্রায় ২৬০ টি আসনের বিপরীতে চার দলীয় ঐক্যজোট মাত্র ৩২টি আসন লাভ করে।
গ্রেফতার
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেবার পর থেকে মোট চার বার তিনি গ্রেফতার হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বরগ্রেফতার হন।
সর্বশেষ তিনি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দূর্নীতির অভিযোগে পুত্রসহ গ্রেফতার হন।২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বার তিনি হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক গ্রেপ্তার হবার পর দীর্ঘ এক বছর সাত দিন কারাগারে অবস্থানকালে তাঁর বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোন মামলারই উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি এবং চলতে থাকা তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে তার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এরপরই তাকে গ্রেফতার করে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ
১৩ নভেম্বর ২০১০ বেগম জিয়া তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছেড়ে যান। তিনি অভিযোগ করেন তাকে বলপ্রয়োগে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তবে সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তিনি স্বেচ্ছায় বাসা ত্যাগ করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থানে নিহত হলে ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদার নামে বরাদ্দ দেন।
২০১২ বিদেশ সফর
২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর করেন। আগস্টে তিনি রাজ পরিবারের আমন্ত্রণে সৌদি আরবে যান এবং পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। এই সফরে তিনি সৌদি রাজপুত্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সালমান আব্দুল আজিজ আল সৌদের সাথে সাক্ষাত করেন। তাদের বৈঠকে দ্বিদেশীয় সম্পর্ক ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রম বাজারের সংকট উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
অক্টোবরে খালেদা জিয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সফর করেন। সফরকালে তিনি চীনের রাষ্ট্রীয় ও দলীয় উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করেন। চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি ও ভবিষ্যত একচ্ছত্র নেতা শি জিনপিঙ্গের সাথে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা করেন। বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক বিষয়াবলীও তাদের আলোচনায় উঠে আসে। জিনপিং ছাড়াও খালেদা জিয়া কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান ওয়াং জিয়ারুইয়ের সাথে দেখা করেন। উল্লেখ্য এ বছরের মাঝামাঝিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্য মূল অর্থদাতা বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যাক্তিবর্গের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলে বিশ্ব ব্যাংককে অনুসরণ করে একাধিক দাতা সংস্থা ঋণ দান থেকে সরে দাঁড়ায় ও প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।
বেগম জিয়ার চীন সফর সম্পন্ন হওয়ার একদিন পর তার রাজনৈতিক দল বিএনপি ঘোষণা দেয় যে চীনা নেতৃবৃন্দ দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন সরকারের বিনিয়োগের বিষয়ে খালেদা জিয়াকে নিশ্চিত করেছেন।
একই মাসে খালেদা জিয়া ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারত সফরে যান। সফরের শুরুতে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় বিরোধী দলীয় প্রধান ও বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে বৈঠক করেন। সফরকালে তার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সালমান খুরশিদ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন ও পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাইয়ের সাথে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। খালেদা জিয়ার ভারত সফরের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে দ্বিদেশীয় সম্পর্ক, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, তিস্তা পানি চুক্তি এবং বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তা।
পদক ও সম্মাননা
২০১১ সালের ২৪ শে মে নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে তাকে ’ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করে। যুক্তরাষ্ট্রের কোন ষ্টেট সিনেট কর্তৃক কোন বিদেশীকে এ ধরনের সম্মান প্রদানের ঘটনা এটাই ছিল প্রথম।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***
@FeniOnline
Comments