১৬ জুনের রাত—১৯৭১ সাল। কোনো দিন ভুলব না সেই রাতের কথা; যে রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিক্ষিপ্ত আর্টিলারি বোমার আঘাতে আমার মা, বাবা, তিন ভাই, দুই বোনসহ ২৭ জন নিকটাত্মীয় মারা যান।
তাঁদের কবর দিতে পারিনি। ৪০ বছরেও কোন কবরে আমার বাবা, আর কোন কবরে আমার মা শুয়ে আছেন, সেটি শনাক্ত করতে পারিনি। ৪০ বছরেও মা বাবার কবর পাইনি।
যখনই তাঁদের কথা মনে পড়ে, তখন পাশাপাশি পাঁচটি গণকবরের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া-দরুদ পড়ে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও সনদ পাইনি। অথচ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি, এ ধরনের কিছু চিহ্নিত লোককে যখন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ পেয়ে নিয়মিত ভাতা তুলতে দেখি, তখন খুব দুঃখ পাই।
আমি তখন পরশুরাম উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। গ্রামের বড় ভাইদের উত্সাহে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চলে যাই সীমান্তের ওপারে চোত্তাখোলায়। সেখানে ইয়ুথ ক্যাম্পে যোগ দিই। শুরু হয় তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। ১৯৭১ সালের ১৬ জুন রাত আনুমানিক দুইটায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বেশ কটি শক্তিশালী আর্টিলারি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। তখন আমি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। পরদিন ১৭ জুন সকালে খবর পাই, আমাদের বাড়িতেই সেই বোমাগুলো পড়েছিল। সকালে চোত্তাখোলায় অবস্থিত ফেনীর আওয়ামী লীগের নেতা মরহুম খাজা আহম্মদকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে এসে লাশ দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তখন স্থানীয় লোকজন আমাকে সীমান্তের ওপারে ননী গোপাল ধুপির বাড়িতে নিয়ে রাখে। পরে জানতে পারি, পাশের গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমানসহ (বর্তমানে ফেনী ডিসি অফিসে কর্মরত) ২০-২২ লোক পাঁচটি কবর খুঁড়ে দুটিতে পুরুষদের, দুটিতে মহিলাদের এবং একটিতে শিশুদের লাশ দাফন করেন।
***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***
@FeniOnline
Comments