fbpx

ফেনী জেলার সম্ভাবনাময় পর্যটন স্থান “শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা”

বাঁশের কেল্লা নামটি শুনলে অনেকেরই মনে পড়বে তীতুমীরের ঐতিহাসিক বাঁশের কেল্লার কথা ৷ যে কেল্লাটি তিতুমীর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ব্যবহার করেছিল। তেমনি ফেনী জেলায় বাঁশের কেল্লা নামে একটি রিসোর্ট আছে তা বোধহয় অনেকেই জানেন না । এই কেল্লারুপি রিসোর্টটি “শমসের গাজির বাঁশের কেল্লা” নামে পরিচিত। শমসের গাজী ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধি বিপ্লবী, কৃষক বিদ্রোহের নায়ক। তার নামেই এই কেল্লাটি স্থাপিত হয় ।

বাঁশের কেল্লার নামকরনের ইতিহাসঃ
ইতিহাস থেকে জানা যায়, শমসের গাজি তার শক্তি ও সাহসের কারনে তৎকালীন ত্রিপুরা রাজাকে প্রতিহত করে ত্রিপুরা রাজ্য দখল করেন। তিনি প্রজাহিতকর অনেক কাজ করেন। শমসের গাজী ছিলেন বাংলার বাঘ কৃষক বিদ্রোহের নায়ক। কিন্তু ১৭৫৭ সালে তার পরাজয় হলে তৎকালীন ত্রিপুরা রাজা কৃষ্ণ মানিক্য বাহাদুর শমসের গাজীর রাজপ্রাসাদসহ অনেক স্থাপনা ধ্বংস করে দেন । তবে চম্পকনগর পাহাড়ে তার প্রাসাদের ভগ্নাংশ দেখা যায়। শমসের গাজীর বংশধরেরা আজও সোনাপুর গ্রামে বাস করতে দেখা যায়। শমসের গাজীর দূর্গটি এখন বিলুপ্ত হলেও তার সেই স্মৃতি আঁকড়ে ধরতেই নির্মান করা হয়েছে “শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা” নামক রিসোর্ট। ওই স্থানে শমসের গাজীর প্রাসাদ থাকার কথা হলেও শত্রুরা এটি মাটির সাথে মিশিয়ে দেন তাই তার স্মৃতি আঁকড়ে ধরতেই এই কেল্লাটি নির্মান করা হয়। এটি প্রায় ৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত করা হয়।

ফেনী-জেলার-সম্ভাবনাময়-পর্যটন-স্থান-শমসের-গাজীর-বাঁশের-কেল্লা

অবস্থানঃ
ভাটির বাঘ শমসের গাজীর কেল্লা ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার জগন্নাথ সোনাপুর ও চম্পকনগর গ্রামে অবস্থিত।শমসের গাজীর প্রাসাদটি ধবংস হলেও অন্যান্য কিছু স্থাপনা এখনো স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে র‍য়ে গেছে । ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার চম্পকনগর গ্রামে ও জগন্নাথ সোনাপুরে বর্তমান ভারত সীমান্তের কাছে শমসের গাজীর কৈয়ারা দীঘি , গুপ্ত সুরঙ্গ এখনো আছে।

নির্মান শৈলিঃ
শমসের গাজীর উত্তরসূরি ওয়াদূদ ভুইয়া এই কেল্লাটি গড়ে তুলেন। কানাডার লুই ইউনিভার্সিটির স্থাপত্যশৈলী “সুরান না “এটি নির্মানে কাজ করেন। বাঁশ, খড় আর ছনের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই সম্পূর্ণ রিসোর্টটি। এই রিসোর্টির ভিতরে বাইরে সম্পূর্ণটাই বাঁশের তৈরি । বাঁশের তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্ম ও আসবাবপত্র রয়েছে৷ প্রবেশপথেই চোখে পড়বে একটি ভাস্কর্য “ঐকতান”। সাহিত্য আড্ডা বা যেকোন অনুষ্ঠানের জন্য খাগড়াছড়ির পাহাড়ি বাড়ির আদলে তৈরি বাঁশের মাচাং ঘর। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সুদৃশ্য লেক ও একটি ব্রিজ । পায়ে চালিত নৌকা নিয়ে চলতে পারবেন লেকে৷ লেকের অপরপাশে র‍য়েছে একটি চিন্তামগ্ন স্ট্যাচু । পাশাপাশি ডাইনিং কক্ষ, চা কর্নার,পাঠ কক্ষ, অতিথি কক্ষ, পানির ফোয়ারাসহ উপভোগ করার মত অনেক কিছু। রিসোর্টের পাশে শমসের গাজীর দুটি কাঁচা ঘর এখনো অক্ষত আছে৷ এছাড়া ত্রিপুরাদের পাহাড়ি নৃত্য এই বাঁশের কেল্লার বিনোদনের অন্যতম আকর্ষন। অগ্রীম বুকিং দিয়ে এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সেমিনার করা হয়ে থাকে,এবং বনভোজন, বিয়ে ও বারবিকিউর সু-ব্যবস্থা রয়েছে।

আমাদের দেশে ৬৪টি জেলায় এমন অনেক দর্শনীয় স্থান ও পর্যটক কেন্দ্র ছড়িয়ে আছে। জানার অভাবেই এসকল স্থানে পর্যটক এর আনাগোনা কম। যদি ই- ট্যুরিজমে এই সকল পর্যটন কেন্দ্র যুক্তে হয় তবে সবাই বেশি বেশি জানবে ও এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। এবং বাঁশের কেল্লার ই- ট্যুরিজম সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর যদি এ নিয়ে ইন্টারনেটে ভাল কন্টেন্ট লেখা হয় তাহলে এটির পর্যটন সম্ভাবনা বেড়ে যাবে এবং ভ্রমনপিপাসুরা এসব স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে৷

লেখক : সুমাইয়া শম্মী।

***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***

FeniOnline.net Telegram Channel@FeniOnline

Comments

DMCA.com Protection Status
Bidvertiser2074653
error: Something went wrong !!