ফেনী জেলার প্রাণ কেন্দ্র ট্রাঙ্ক রোডের পাশেই তাকিয়া রোডস্থ তাকিয়া বাড়িতে এই পাগলা মিয়ার মাজারটি অবস্থিত। স্থানীয়রা এই জায়গাটিকে তাকিয়া মসজিদ নামে চেনে। এই মাজারের প্রধান আকর্ষণ হলো এটির নকশার কারুকাজ সম্পন্ন গম্বুজ।
ফেনী অঞ্চল ও এর আশে পাশের সকল ধর্মের মানুষের কাছে এটি এক পরম তীর্থ কেন্দ্র।
পাগলা মিয়ার প্রকৃত নাম হযরত শাহ সৈয়দ আমির উদ্দিন ওরফে পাগলা মিয়া। তবে তিনি তাঁর আসল নামের আড়ালে পাগলা মিয়া নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি একাধারে ছিলেন
পাগল, আধ্যাত্বিক সাধক এবং সকল ধর্মের সকল জাতের ঊর্ধ্বে এক মহামানবতার প্রতীক।এ মহান পাগল সাধকের আদি নিবাস ছিলো বাগদাদ। তাঁর পিতা ছিলেন সৈয়দ বশির উদ্দিন এবং মাতার নাম সৈয়াদা মায়মুনা খাতুন। পাগলা মিয়া ছিলেন তাঁর পিতা মাতার একমাত্র সন্তান।
তিনি ১৮২৩ সালে (বাংলা ১২৩০ সালে) ফেনীর ফাযিলপুরের ছনুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই মহান সাধক ১৮৮৭ সালে (১২৯৩ বাংলা সনের ১৩ই শ্রাবণ) রোজ বুধবার মাত্র ৬৩ বছর বয়সে ফেনীর তাকিয়া বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। ওফাতের পরে তাঁকে সেই স্থানেই সমাহিত করা হয়। তাঁর এই সমাধী স্থান ঘিরেই তাঁর মাজার শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের প্রথম বৃহষ্পতিবার (তাঁর জন্মদিনে) ও শুক্রবার তাকিয়া বাড়িতে পাগলা মিয়ার ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার লোক সমবেত হয় । তিনি আধুনিক ফেনী জনপদের মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর অপরিসীম প্রভাব রেখে গেছেন । তাঁর আধ্যাত্নিক শক্তি সম্পর্কে ফেনী অঞ্চলে বহু জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে । এখনো প্রতিদিন তাঁর মাজারে মানুষ দলে দলে ফাতেহা পাঠ করে,জেয়ারত করে এবং ‘‘মানত’’করে ।
♣ এবার জেনে নেয়া যাক তার সম্পর্কে কিছু কথাঃ
শিশুকাল থেকেই এই সাধকের মধ্যে নানা রকম পাগলামীর ভাব পরিলক্ষিত হয়।তাঁর বয়স যখন চার বৎসর তখন তাঁর পিতা মাতা চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। সে সময়
থেকে তিনি পড়া শুনার প্রতি খুব মনোযোগী ছিলেন এবং সব সময় সাদা কাপড় পরতেন এবং নিরিবিলি থাকতে পছন্দ কতেন। মাদ্রাসার নিয়ম শৃঙ্খলায় আদব কায়দাতে তাঁর খুব সুনাম ছিলো। তাঁর বয়াস যখান বার বছর তখন তিনি বাড়িতে তাঁর মায়ের কাছে আসেন। বাড়িতে এসে তাঁর বাড়ির আঙিনায় একটি আমগাছের চারদিকে কাপড়ের ঘেরা দিয়ে নিরিবিলি ধ্যানে মগ্ন হয়ে রইলেন। এ সময় তিনি খাওয়া দাওয়া ভুলে সকল সংগ ত্যাগ করে রইলেন। বেশ কয়দিন এভাবে যাওয়ার পর তাঁর স্নেহময়ী মাতা আস্থির হয়ে উঠলেন। ছেলের এ আবস্থা দেখে তিনি বিলাপ করে কাঁদতে লাগলেন আর পাগল ছেলেকে সেখান থেকে উঠে আসতে বললেন। মায়ের এ অবস্থায় তিনি সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে বের হয়ে আরো বেশী পাগলের মত লোকজনকে গালালাগালি করতে লাগলেন। সে সময় নিকটবর্তী পাহাড়ে রাখাল ছেলেদের ও চাষীদেরকে বকাবকি শুরু করেন। তখন তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃত হয়েছে এই ধারনায় তার প্রতিবেশী ও পার্শবর্তী লোকজন তাঁকে ‘মিরেরগো পাগল, মীরেরগো পাগল’ বলে ডাকতে লাগলো। সেই থেকে তিনি মীরেরগো পাগল বলে পরিচিত হলেন। আর একের পর এক পাগলামী কর্মকান্ড করে চললেন। কিন্তু তাঁর সেই পাগলামোর মধ্যে ছিলো গভীর আধ্যাত্বিকতা ও গূড় রহস্য। সে পাগলামো কেউ তাৎক্ষণিক না বুঝতে পারলেও পরবর্তী কালে মানুষ তা দৃঢ়ভাবে অনুভব করতে থাকে
***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***
@FeniOnline
Comments