fbpx

জার্নি ফর লাইফ: ফেনী ভ্রমণ

বিষাদগ্রস্থ মন নিয়ে বিষন্ন না হয়ে খুব সহজে মন ভাল করে নিতে পারেন। আর মন ভাল করার সব চেয়ে ভাল পথ হলো ভ্রমণ। প্রতিনিয়ত যে শত শত মানুষের সাথে চলাফেরা করেন তাদের মধ্য থেকে ৩/৪ জন পাগল কে ডেকে নিয়ে বের হয়ে পড়ুন। এই দেশে আর প্রকৃতি আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না।

আপনি যদি চট্টগ্রাম থেকে থাকেন তাহলে দিনের শুরুতেই এ কে খান মোড় চলে আসুন। এখান থেকে ফেনীগামী যে কোন বাসে উঠে পড়ুন। গন্তব্য না ঠিক করেই উঠে পড়তে পারেন। কোন সমস্যা নেই। কারণ সিটি গেইট পার হয়ে আপনি যে কোন জায়গায় নামতে পারেন। যেখানে নামুন না কেন, কথা দিলাম অপার সৌন্দর্য্যের এই লিলাভূমি আপনার যত দুঃখ-কষ্ট, গ্লানি আছে সব মুছে দিবে। আপনি শুধু একবার বের হয়ে পড়েন।

এবার বলেন, আপনি কোথায় নামবেন? ভাটিয়ারি, বারকুন্ড, সীতাকুন্ড, মিরেশ্বরাই, বারৈয়ারহাট নাকি ফেনী? চাইলে আপনি চোদ্দগ্রাম কিংবা কুমিল্লায়ও চলে যেতে পারেন। চলেন, মনের খেয়ালে আপনাকে আজ ফেনী নিয়ে যাই। বাস থেকে ফেনী মহিপাল নেমেই হালকা নাস্তা করে নিতে পারেন। মহিপাল মোড়েই কয়েকটি ভাল মানের হোটেল পাবেন নাস্তা করার জন্য। নাস্তা সেরেই একটি সি এন জি ঠিক করে নিন সারা দিনের জন্য। সি এন জি ওয়ালাকে বলবেন আপনাদের ফেনী শহর দেখতে এলাম। সারা দিন ঘুরিয়ে দেখাবেন আপনাদের ফেনী। ব্যাস্! আপনাকে আর কিছু করতে হবে না। ঐ সি এন জি ওয়ালা-ই সব করবে। কথিত আছে, নোয়াখালী-ফেনীর লোক অতিথি পরায়ণ। আমার নিজের বাড়ি নোয়াখালী বলে বলছি না, আমি নিজেও মনের খেয়ালে দুই বার ফেনী ভ্রমণ করে গেলাম সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

যেহেতু ফেনী এলেন কোন কোন জায়গায় যাবেন আর কি কি দেখবেন তার একটা তালিকা করে নিন। প্রয়োজনে গুগলের সাহায্য নিতে পারেন। তাছাড়া বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ওয়েব সাইটেও ফেনীর বিখ্যাত জায়গার তালিকা দেখে নিতে পারেন। ফেনী জেলায় যে সকল বিখ্যাত জায়গা আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মুহুরী প্রজেক্ট (সোনাগাজী), সাতমন্দির (ছাগলনাইয়া), চাঁদগাজী মসজিদ (ছাগলনাইয়া), সামসের গাজী দিঘী এবং সুডঙ্গপথ (ছাগলনাইয়া), শিলুয়ার শীল পাথর (ছাগলনাইয়া), ছাগল নাইয়া বোর্ডার বাজার (প্রতি মঙ্গলবার এই বাজার বসে), শুভপুর ব্রীজ (ছাগলনাইয়া), চৌধুরি বাড়ী মসজিদ (দাগনভূঁইয়া), ……

প্রথমবার ফেনী ভ্রমণ হলে আপনার জন্য ছাগলনাইয়া রোডে যাওয়াই ভাল। এই একই পথে আপনি অনেক গুলো জায়গা ঘুরে দেখতে পারেবেন।

DSC_0699
ফেনী থেকে ছাগলনাইয়া যাওয়ার পথে এরকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে পাবেন
_DSC0093
রাস্তার পাশে ফসলী মাঠ। সোনার ধান ক্ষেত।

সাতমন্দির:

ছাগলনাইয়ার হিন্দু জমিদার বিনোদ বিহারির বাড়িটি আট একর জায়গাজুড়ে নির্মিত। বর্তমান উপজেলা শহরের বাঁশপাড়ায় এর অবস্থান। ছাগলনাইয়া বাজারের পূর্ব পাশেই এটি অবস্থিত। বাড়ির পাশে রয়েছে সাতটি চিতা মন্দির। এজন্য এর নাম সাত মন্দির বাড়ি বা রাজবাড়ি বা সাত মঠ হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। ১৯৪৮ সালের দিকে জমিদার বিনোদ বিহারি কলকাতা চলে যান। বাড়িটি রেখেই তিনি চলে যান। বর্তমানে অনেকটা পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে বসবাস করেন। এটি ফেনী জেলার প্রাচীন একটি মন্দির বা মঠ।

চাঁদগাজী ভুইয়া মসজিদ: সাত মন্দির দেখে এবার চাঁদগাজী ভুইয়া মসজিদ দেখতে রওনা দেন। মসজিদটি জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার চাঁদগাজীতে অবস্থিত।

SDC16328

 

SDC16344

চাঁদ খাঁ মসজিদ নামে পরিচিত চাঁদগাজী মসজিদটি ফেনী জেলার একটি প্রাচীন মসজিদ যেটি হিজরি ১১১২ সালে নির্মাণ করা হয়। মসজিদের সামনের দরজায় রক্ষিত শিলালিপি থেকে জানা যায় জনৈক চাঁদ গাজী ভুইয়া নামক এক ব্যাক্তি এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। এই মসজিদের তিনটি গম্বুজই এক সারিতে অবস্থিত যেগুলোর মধ্যে মাঝখানের গম্বুজটির আকার অন্যান্য গম্বুজগুলোর তুলনায় বড়। চাঁদ গাজী ভুইয়া মসজিদের গম্বুজগুলোর উপরে পাতা এবং কলসের নয়নাভিরাম নকশা রয়েছে যা মসজিদের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

গম্বুজগুলো ব্যতিত এই মসজিদের দেয়ালের উপর সমান্তরালভাবে ১২ টি মিনার রয়েছে যেগুলোর স্থাপত্যশৈলী একই ধরনের। মিনারগুলোর মধ্যে চারটি চার কোণায় অবস্থিত এবং বাকি ৮টি মিনার দেয়ালের উপর অবস্থিত। চাঁদ গাজী ভুইয়া মসজিদের পূর্ব দিকের দেয়ালে এবং সামনের দরজার উপরে টেরাকোটার নকশা রয়েছে।

শমসের গাজী দীঘি ও সুড়ঙ্গ পথ: বৃটিশ শাসনের আগে ভারতীয় উপমহাদেশে (তথা ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ) মুসলীম শাসকরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। তাদের মধ্যে বাংলার বীর শমসের গাজী অন্যতম। তার জম্মস্থান ছিল ছগলনাইয়া (ফেনী) উপজেলার চম্পকনগরে। এই জম্মস্থানছিল বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পড়েছে। এখানে তার স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক সুরঙ্গ পথ, শমসের গাজী দিঘী, এবং তারই খনন করে তৈরী করা এক খোইল্লা দিঘীসহ প্রবেশ পথ, বসত ঘরের চিহ্ন হিসাবে পড়ে আছে। এটি ভারত ও বাংলাদেশসীমান্তবর্তী পাহাড়ে। শমসের গাজীর বসত ঘরের দঃ পূর্বে যে দিঘী রয়েছে তার নাম শমসের গাজী দিঘী। এই দিঘীতে তারস্ত্রী সহ গোসল করতেন। স্ত্রী ছিলেন পদা শীল। শমসের গাজী পর্দাকে পছন্দ করতেন। স্ত্রীর পর্দার জন্য এই সুরঙ্গপথটি তৈরি করেন। যাতে তার সৌন্দর্য্যরে প্রতি কারও দৃষ্টি না পড়ে। সে জন্য এ পথে দিঘীতে যাওয়া আসা করতেন।

_DSC0097
টিলা পাহাড়ের উপর দিঘী।

20160825_173305

_DSC0235
সুড়ঙ্গ পথ যা বর্তমানে অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে।

শুভপুর ব্রীজ:

শুভপুর ব্রীজ

ছাগলনাইয়ার প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের আরেকটি অন্যতম নিদর্শন ফেনী নদীর উপর নির্মিত শুভপুর ব্রীজ।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতির সাথে জড়িত এই ব্রীজটি থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধকরেছিল অনেক বীরযোদ্ধা। এর চার পাশে রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য।

শিলুয়া শীল:

pathar of heritage of sagolnaiya

ছাগলনাইয়া উপজেলায় শিলুয়া গ্রামে রয়েছে এক প্রাচীন ঐতিহাসিক শিলামূর্তির ধ্বংসাবশেষ । শিলামুর্তির গায়ে খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় অব্দে প্রচলিত ব্রাক্ষ্মী হরফের লিপি থেকে এখানে আর্য সভ্যতা বিকাশের প্রমাণ পাওয়া যায় । ব্রিটিশ আমল থেকে এ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্মৃতি চিহ্নটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত রয়েছে।

পাগলা মিঞাঁর মাজার: ফেনী রেলওয়ে ষ্টেশন হতে সিএনজি অটোরিক্সা এবং রিক্সা যোগে বা  ফেনী জিরো পয়েন্ট হতে রিক্সা যোগে পাগলা মিঞাঁর মাজার যাওয়া যায়।

hazrat pagla babar majar

বিজয় সিংহ দিঘী: ফেরার পথে আপনার সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে চলে আসুন মহিপাল থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরুত্বের বিজয় সিংহ দিঘীর পাড়ে। ফেনী সার্কিট হাউজের পাশেই এটি অবস্থিত। বিকেল বেলা সময় কাটানোর জন্য ফেনীতে সব চেয়ে সুন্দর জায়গা হলো এই বিজয় সিংহ দিঘী। একদম শেষ বিকেলে এই দিঘীতে গোসল করে আপনি নতুন উদ্যমে ফিরে যেতে পারেন আপনার ইট কাঠের শহরে।

DSC_0910
বিজয় সিংহ দিঘীর পাড়ে আমরা।

আরও দেখার আছে  চৌধুরী বাড়ি মসজিদ (দাগনভূঁইয়া), সেনের খিল চৌধুরী বাড়ী (সোনাগাজী)। এগুলো নিয়ে আগামী কিস্তি লিখবো।

যাতায়াতযদিও চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে এই লিখা তবে ঢাকাচট্টগ্রামনোয়াখালীকুমিল্লাসহ দেশেরযে কোন জায়গা থেকে আপনি সহজে ফেনী
ভ্রমণ করতে পারেন। ঢাকার টিটিপাড়া থেকে স্টারলাইনড্রিম লাইন বাসে করে ফেনী আসতে পারেনট্রেনেও আসতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকেনোয়াখালী/ফেনী/কুমিল্লাগামী যে কোন বাসে করে আপনি ফেনী আসতে পারেন। 

খরচ:

খরচ নিয়ে টেনশানের কিছু নেই। ৪/৫ জন হলে গড় খরচ ৬০০-৭০০ তে হয়ে যাবে। সারা দিনের রিজার্ভ CNG ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকা। সকালের নাস্তা, সারা দিনের চিপস, বাদাম, আচার, ডাব, সিঙ্গারা চমুছা, দুপুরের খাবার আর শেষ বিকেলর ক্লান্তি দূর করতে বিজয় সিংহ দিঘীর পাড়ের রং চা এতেই সেরে যাবে।

 

লেখক: Md Shofiul Azam Qurishy
sa123qurishy.wordpress.com থেকে সংগৃহীত।

 

***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***

FeniOnline.net Telegram Channel@FeniOnline

Comments

DMCA.com Protection Status
Bidvertiser2074653
error: Something went wrong !!