fbpx

ফেনীর ঐতিহ্যবাহী খন্ডলের মিষ্টি অপূর্ব সৃষ্টি

চুলা থেকে মাত্রই নামানো হয়েছে উত্তপ্ত কড়াই। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে গেলো বিকিকিনি। সবারই চাহিদা ধোঁয়া ওঠা গরম মিষ্টির। এ চিত্র ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের খন্ডলহাই বাজারের এক মিষ্টির দোকনের। সাধারণত সারাদেশে ঠান্ডা মিষ্টি খাওয়ার চল থাকলেও ওই বাজারের খন্ডলের মিষ্টি খেতে হয় গরম-গরম। ধোঁয়া ওঠা গরম এ মিষ্টি তাই স্বাদে ও বৈচিত্র্যে হয়ে উঠেছে অনন্য।

জানা যায়, গরম গরম খন্ডলের মিষ্টির স্বাদ চোখে দেখতে প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন খন্ডলহাই বাজারে। সেইসঙ্গে দিনে দিনে বাড়ছে এ মিষ্টির প্রচার ও খ্যাতি। দেশের গন্ডী পেরিয়ে প্রবাসীদের হাত হয়ে এ মিষ্টি যাচ্ছে দূর পরবাসেও। প্রায় গত ৫০ বছর ধরে ঐতিহ্য ধরে রেখে তৈরি হচ্ছে পরশুরামের খন্ডলের মিষ্টি। তবে সময়ের চাহিদার কারণে একই নামে একাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এতে করে অনেক সময় আসল  খন্ডল পেতে বিভ্রান্তিতে পড়েন ক্রেতারা। খন্ডলের মিষ্টির অতীত ঘেঁটে জানা যায়, স্বাধীনতার পরপরই স্থানীয় কবির আহাম্মদ পাটোয়ারী বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের খন্ডল হাইস্কুলের পাশে ছোট একটি মিষ্টির দোকান দেন। ওই দোকানে কারিগর হিসেবে কাজ নেন কুমিল্লার যোগল চন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তি।

অল্পদিনের মধ্যেই তার তৈরি সুস্বাদু মিষ্টির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। একসময় এলাকার নামেই তা পরিচিত হয়ে ওঠে খন্ডলের মিষ্টি নামে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে জেলায় বর্তমানে অনেকগুলো খন্ডলের মিষ্টির দোকান গড়ে উঠেছে। তবে খন্ডলের মিষ্টির আদি স্বাদ এখনো ধরে রেখেছে কবির আহাম্মদ পাটোয়ারীর ও খন্ডলের মিষ্টি মেলা। খন্ডলের মিষ্টির আদি কারিগর যোগল এখন বয়সের ভারে ন্যূজ। ফলে তিনি আর এখন মিষ্টি তৈরি করেন না। দোকানি কবির আহাম্মদও বয়সের কারণে আর ব্যবসা সেভাবে পরিচালনা করতে পারেন না। কথা হয় খন্ডলের মিষ্টির উদ্যোক্তা আমির হোসেনের সঙ্গে। গর্বের সঙ্গে তিনি জানান, ৯০ এর দশকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একবার পরশুরামে এসে এ মিষ্টি খান। এরপর তিনি যতবার ফেনী আসতেন এ মিষ্টি খেতেন। এ মিষ্টির প্রতি তার এ আগ্রহের কারণেই পরে সারাদেশে খন্ডলের মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি জানান, ঈদ-পূজা-পার্বণ-পরীক্ষা সবসময় তার বিক্রি ভালো। তখন দৈনিক এখানে ৯০ থেকে ১০০ কেজি মিষ্টি তৈরি করা হয়। অন্যসময় তৈরি হয় ৫০ থেকে ৬০ কেজির মতো।

তিনি আরো জানান, মিষ্টি খেতে জেলার বাইরে থেকেও আসেন অনেকে। এ মিষ্টি তৈরি করেই জেলায় প্রায় শতাধিত পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদের দুই ভাইয়েরও সংসারও চলে মিষ্টির মাধ্যমে। বর্তমানে আদি খন্ডলের স্বাদ ধরে রেখে এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন কবির আহাম্মদের ছেলে বেলাল হোসেন ও আমির হোসেন। আমির হোসেন জানান, তাদের প্রবীণ কারিগর যোগল ৬২ রকমের মিষ্টি তৈরি করতে পারতেন। তার মিষ্টি তৈরির দৃশ্য দেখতেই একসময় দোকানে অনেক মানুষের সমাগম হতো। বেলাল হোসেন জানান, এখনো প্রতিদিন বিভিন্নভাবে ও গাড়িতে করে দূর-দূরান্ত থেকে মিষ্টি খেতে লোকজন তাদের দোকানে আসেন।

তারাও পরম আতিথেয়তায় গরম মিষ্টি খাওয়ান। বেশিরভাই গরম-গরম খন্ডল মিষ্টি বাড়িতে নিয়ে যান। তিনি আরো জানান, বর্তমানে বাজারে অনেক নামী-দামী মিষ্টি রয়েছে, যাতে নানা ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের মিষ্টিতে ক্ষতিকারক কিছু মেশানো হয় না। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ঐতিহ্যবাহী এ মিষ্টি তৈরি আর কতদিন ধরে রাখতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তার। তবে বংশ পরস্পরায় এটি টিকে থাকবে বলে আশা করেন তিনি। এলাকার মানুষও চান তাদের এ মিষ্টি টিকে থাকুক। তাদের দোকানে গিয়ে কথা হয় জাকির হোসেন নামে এক যুবকের সঙ্গে। তিনি এসেছেন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা থেকে। তিনি জানান, খন্ডলের মিষ্টির কথা অনেক আগে থেকেই শুনে আসছেন। তাই সুযোগ করে গরম মিষ্টি খেতে চলে এসেছেন। বাড়িতেও নিয়ে যাবেন এ মিষ্টি।

তৈরির প্রক্রিয়া
বেলাল হোসেন জানান অপূর্ব স্বাদের এ মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া। তিনি জানান, এ মিষ্টি তৈরিতে গরুর খাঁটি দুধ, সামান্য ময়দা ও চিনি ব্যবহার করা হয়। মিষ্টির সঙ্গে অন্য কোনো রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয় না। দুধের সঙ্গে সামান্য ময়দা ব্যবহার করা হয় ছানাকে গাঢ় করার জন্য। প্রথমে দুধ ও ময়দার মিশ্রণ থেকে ছানা তৈরি করা হয়। এরপর ছানা থেকে তৈরি করা হয় মরু, মরু থেকে খণ গোলাকার মিষ্টি। এরপর সে মিষ্টি তেলে ভেজে তা চিনি দিয়ে তৈরি শিরায় ডুবিয়ে রাখা হয়। তিনি জানান, প্রতিকেজি মিষ্টি তৈরি করতে ১০০ টাকার মতো খরচ হয়, আর তারা বিক্রি করেন ১৩০ টাকায়। তবে কেউ চাইলে ভিপি-পার্সেল করেও মিষ্টি পাঠানো হয়।

 

।।মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন।।

 

***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***

FeniOnline.net Telegram Channel@FeniOnline

Comments

DMCA.com Protection Status
Bidvertiser2074653
error: Something went wrong !!