লেখাঃ আহমাদ ইশতিয়াক : ঢাকা থেকে ভোরে ট্রেনে ফেনী নামলে টমটম কিংবা শহর বাস সার্ভিসে চলে যাবেন ফেনীর মহিপাল। আর বাসে আসলে মহিপালেই নেমে যেতে পারেন। মহিপাল থেকে উঠবেন নোয়াখালীগামী বাসে। বলবেন সেবারহাট বাজারে নামিয়ে দিতে। এখান থেকে যাবেন দাগনভূঁইয়া।
দাগনভূঁইয়া নেমে উঠুন বেকেরবাজার কিংবা সিলোনিয়াগামী সিএনজিতে। নামবেন মাতুভূঁইয়া রাস্তার মোড়ে। মাতুভূঁইয়া দাগনভূঁঞার ভাই। রাস্তা থেকে হেঁটে এক আধা কিলোমিটার হেঁটে গেলে পাবেন নদীর পাড়েই পাবেন মোঘল স্থাপত্যের আরেক অপূর্ব নিদর্শন মাতুভূঁইয়া জামে মসজিদ। এই মসজিদটি ৩০০ বছরের ও প্রাচীন। মসজিদের পাশেই রয়েছে ২০০ বছরের প্রাচীন একটি বটগাছ। ফিরে আসুন মূল রাস্তায়। হেঁটে খানিকটা এগোলেই রাস্তার পাশেই দেখতে পাবেন সালামনগরের দিক নির্দেশনার সাইনবোর্ড।
আন্দাজ করতে পারছেন খানিকটা? মহান ভাষা শহীদ আবদুস সালামের বাড়ি। নদীর পাড়ে ভাষা শহীদ সালামের নামে কমপ্লেক্স ও সালাম যেখানে পড়েছেন সেই স্কুল। কাউকে বললে দেখিয়ে দিবে সালামের বাড়িও। খানিকটা সময় কাটিয়ে চলে আসুন ফের মূল রাস্তায়।
এবার যাবো ফেনী জেলার সবচেয়ে সুন্দর জায়গায়।
মুহুরী সেচ প্রকল্প, লোকে চিনে মুহুরী প্রজেক্ট নামে। যেহেতু আমাদের সময় কম তাই দাগনভূঁইয়া থেকেই যাবো। কারণ ফেনী হয়ে গেলে অনেক সময় লাগবে।
চলে আসুন দাগনভূঁইয়া বাজারে। ফাজিলের ঘাট রোড থেকে চাইলে মুহুরী প্রজেক্টের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারেন। আবার চাইলে লোকাল সিএনজি করেও যেতে পারেন। লোকালে যেতে চাইলে যেতে হবে প্রথমে যেতে হবে কুঠিরহাট। ভাড়া নিবে ২৫ টাকা। কুঠিরহাট থেকে পাবেন মুহুরী প্রজেক্টের গাড়ি।
মুহুরী প্রজেক্ট হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখানে অবস্থিত। দেশের সবচেয়ে বৃহত্তং মৎস্য জোন ও এই মুহুরী প্রজেক্ট।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম মৎস্য প্রকল্পগুলো এই মুহুরী প্রজেক্টেই।
একপাশে নদী আর একপাশে মাছের ঘের, দূরে নদীর চরে মহিষের বাথান আর অজস্র পাখির কলকাকলি। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে মাছের ঘেরের পাশে বসে নিতে পারেন খানিক বিশ্রাম। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসুন কেওড়া বনে। অপূর্ব বনভূমির মাঝে উড়ে যাওয়া বক হটহট্টি মাছরাঙ্গার মাছ শিকার দেখতে পাবেন মুগ্ধতার চোখে। স্লুইসগেটে ফিরে এসে দেখুন দেশের একমাত্র বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। এখানে খুব কম খরচে কিনতে পারেন ঘেরের কিংবা নদীর তাজা মাছ।
দেখুন বিকেল ঘনিয়ে এসেছে। এবার চলুন দেখবেন আরেক ঐতিহাসিক স্থাপনা সেনেরখিল জমিদার বাড়ি। চলে আসুন মুহুরী প্রজেক্ট থেকে সোনাগাজীতে।
সোনাগাজী থেকে পাবেন সেনের খিলের সিএনজি কিংবা রিকশা।
সেনেরখিল জমিদার বাড়ি ৫০০ বছরের প্রাচীন।
সেনেরখিলের জমিদার উপেন্দ্র সেনগুপ্ত চৌধুরী ও মহেন্দ্র সেনগুপ্ত চৌধুরীর দুই পর্যায়ে এই বাড়ি নির্মাণ করেন।। এই বাড়িতেই স্মৃতি জড়িয়ে আছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক মাষ্টারদা সুর্যসেন ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের অসংখ্য স্মৃতি। তাঁরা বেশ কবার এসে থেকেছেন এখানে। জমিদার বাড়ি থেকে একটু হাঁটলেই কিংবদন্তি নাট্যকার নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের গ্রামের বাড়ি ও জন্মস্থান।
অবশ্য যদি একটু সময় থাকেও দেখতে পারবেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ও সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের জন্মভিটে ও শৈশব জড়িত মজুপুর গ্রাম। যেখানে রয়েছে হাজার বছর ধরে উপন্যাসের বিখ্যাত পরীর দিঘি ও সংশপ্তক উপন্যাসের জনপদ।
এবার ফেরার পালা।
যেভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে ট্রেনে ও বাসে ফেনী যাওয়া যায়।
ট্রেনে যেতে চাইলে চট্টগ্রামগামী রাতের শেষ ট্রেন তূর্ণা নিশিথায় চলে যান। রাত সাড়ে ১১টায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া তূর্ণা নিশিথায় ফেনী পৌঁছে সাড়ে চারটায়! ভাড়া ২৬৫ টাকা। আবার কম খরচে চট্টগ্রাম মেইলের যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে মাত্র ৯০ টাকা। বাসে এনা ট্রান্সপোর্টে ও স্টার লাইনে যেতে পারেন। ভাড়া ২৭০ টাকা।
বি:দ্র:- প্রকৃতি ও পুরাকীর্তি আমাদের সম্পদ। দয়া করে পুরাকীর্তির গায়ে আঘাত করবেন না, প্রকৃতিতে যত্রতত্র অপচনশীল ময়লা ফেলবেন না। আপনি যেমন সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, আপনার পরবর্তী প্রজন্ম যেন অধিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।
একদিনে ফেনী ভ্রমণের আদ্যপ্রান্ত (প্রথম পর্ব)
একদিনে ফেনী ভ্রমণের আদ্যপ্রান্ত (দ্বিতীয় পর্ব)
একদিনে ফেনী ভ্রমণের আদ্যপ্রান্ত (তৃতীয় পর্ব)
একদিনে ফেনী ভ্রমণের আদ্যপান্ত (চতুর্থ পর্ব)
অনুভ্রমণ থেকে সংগৃহীত
***ফেনী অনলাইন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।***
@FeniOnline
Comments